
বসতবাড়ি ও তিন ফসলি আবাদি জমির মাঝখানে একই স্থানে অবৈধভাবে তিনটি রাইসমিল গড়ে উঠেছে। ছবি তারার আলো।
তারার আলো খবর:
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদরের ঘনিরামপুর গ্রামের একই স্থানে দুটি অটো রাইস মিলের দূষিত বর্জ্য, ছাই, তুষ, দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও মেশিনের বিকট শব্দে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
এলাকাবাসীরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলে অভিযোগকারীকে মামলা দিয়ে ও হামলা করে হয়রানী করা হয়। তাদের মামলা হামলার শিকার হয়ে অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাদের মিল সংলগ্ন আবাদি জমি তাদের কাছে বিক্রি না করায় ঘনিরামপুর গ্রামের ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তির নামে ১৩টি মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই গ্রামের শ্রী অনকুল নামের এক ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে তার জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি অটো রাইসমিলে কর্মরত এক শ্রমিকের রহস্যজসক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সহ তাদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর হাটবাজার থেকে আধা কিলোমিটার (অর্ধেক কি:মি:) ও উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে আধা কিলোমিটার এর মধ্যে। এক কথায় বলতে গেলে উপজেলা শহরের মধ্যে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের প্রাচীর থেকে ৫০ গজ দূরে ঘনিরামপুর এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে বিএফপি প্রাইভেট লি: ইউনিট-১ ও বিএফপি প্রাইভেট লি: ইউনিট-২ অটো রাইস মিল। এছাড়াও সেখানে রয়েছে , ব্রাদার্স এগ্রো ফুট লি: নামের আরও একটি হাসকিং রাইস মিল বা চালকল। তবে তাদের প্রধান গেটে ব্রাদার্স এগ্রো ফুট লি: লেখা আছে। রহস্যজনক কারণে অন্য অটোরাইস মিল গুলোর সেখানে কোন নাম নেই।
উপজেলা খাদ্য বিভাগের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ তিনটি রাইসমিল (চালকলের) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইকরামুল হক।
পরিবেশ আইন অমান্য করে জনবসতি এলাকায় মানুষের বাসা-বাড়ি ঘেষে অবৈধভাবে এসব অটো রাইস মিল নির্মাণ করা হয়েছে। মিলগুলোতে নেই নিজস্ব পয়ঃনিস্কাশন ও বর্জ্য শোধনাগারের ব্যবস্থা। কৃষকদের অভিযোগ, মিলের উন্মুক্ত বর্জ্য ছাই ও ধানের গুড়া এবং মিলের দূষিত পানি নালা দিয়ে পাশের কৃষি জমিতে পড়ছে। ফলে গত প্রায় ১০/১১ বছর ধরে মিলের আশপাশের কমপক্ষে ১শ’ বিঘা জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
মিলের বর্জ্য তুষ, গুড়া নছিমন করিমন,ভটভটিতে করে উম্মুক্তভাবে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক দিয়ে বহন করে নিয়ে গিয়ে তিন ফসলি আবাদি জমিতে ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। ফলে মিলের বর্জ্য তুষ, গুড়া, ছাই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় পথচারী ও এলাকার শিশু, বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে চোখের নানাবিধ সমস্যায়। এছাড়াও কাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

তাছাড়া দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অটো মেশিনের বিকট শব্দে ও ধান সেদ্ধ করার ট্যাংকিতে হাতুড়ি পেটানোর ফলে উপজেলা সদরের পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে। শিশুদের এ শব্দে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। উপজেলা সদর এলাকায় বসবাসরত মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে পড়েছে। অনেকে তারার আলো অফিসে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন।
তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজের প্রভাষক খলিলুর রহমান খলিল জানান, স্কুল চলাকালে এ অটো রাইসমিল গুলো চালু থাকায়,এর শব্দে শিক্ষাথীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অনেক সময় বাতাসের সাহায্যে মিলে বর্জ্য তুষ,ছাই এসে জানালা দিয়ে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে পড়ছে।
একই কথা বললেন তারাগঞ্জ বালিকা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো: শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও তিনি জানান,এ বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অভিযোগ দেওয়া সত্বেও কোন প্রতিকার মিলেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম তারার আলোকে জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়ে আপাতত আমার জানা নেই। তিন ফসলি জমিতে কলকারখানা স্থাপন করতে হলে কৃষি বিভাগের প্রত্যয়ন নিতে হয়। কিন্তু বিএফপি প্রাইভেট লি: বা ব্রাদার্স এগ্রো ফুট লি: এর তা আছে কি না আমার জানা নেই। আমি এখানে যোগদানের আগে এটি স্থাপন করা হয়েছে। তবে তিন ফসলি কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমরা দেখব।
উপজেলা সদর কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক সরকার ,তারার আলোকে জানান, ছাই, তুষ গাড়ীতে বহনের আগে পানি দিয়ে বহন করার কথা। এছাড়াও ছাই,তুষ যেখানে ফেলছে সেখানে তো পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয় বলে মিল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে। জনস্বার্থের এ বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।

এবিষয়ে উক্ত অটো রাইসমিল গুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকরামুল হকের ০১৭১৪৬০৫৪৬০ নং মুঠোফোনে তারার আলো অফিস থেকে ০১৭১৪০১১৭১৩ নং মুঠোফোন দিয়ে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরে নুরুল ইসলাম নামের ওই মিলে কর্মরত এক কর্মকর্তা মোঠোফোনে তারার আলোকে জানাান, সব নিয়মকানুন মেনেই ২০১৩ সালে অটো রাইসমিল চালু করা হয়েছে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত চলছে।
উপরোক্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এই অভিযোগ গুলো সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।