রংপুর

আগাম আমন ধানের গন্ধ, কৃষকের মুখে হাসি

কমল কান্ত রায়, গঙ্গাচড়া ( রংপুর): রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মাঠে মাঠে আগাম আমন ধানের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকের মুখে ফুটছে সোনালী হাসি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতের মধ্যখানে দোল খাচ্ছে মাথা হেলান আমন ধানের শিস। কোন কোন ধানে লেগেছে রং। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে কৃষকের বুকে যেন অপার আনন্দ। আর ক’দিন পরে ঘরে ওঠবে অনেকের সোনালী ধান। কি আনন্দ কৃষকের। উপজেলার গজঘন্টা ,হাবু, বালারঘাট, চেংমারী, লক্ষীটারী তিস্তার চরাঞ্চল, সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। কেউ বা লাগিয়েছে রিআর-৩৩, কেউ বা বিনা-৭, কেউবা লাগিয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। গজঘন্টা এলাকার হাবু গ্রামের কৃষক আলামীন ৫০ শতক জমিতে বিনা-৭ জাতের , একই গ্রামের অপি ৬৬ শতক ব্রিধান জমিতে বিআর ১৪ ধান লাগিয়েছেন। বকুল একর একরজমিতে হাইব্রিড ধান লাগিয়েছেন। তাছাড়া অনেকে ব্রিধান ৬২ লাগিয়েছেন। হাবু গ্রামের কৃষক আলামীন মিয়া বলেন,আর ১৫/২০ দিন পরে ধান কাটবে । এ বছর ধানের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা অনেকটা খুশি। ধান কাটার পর ঔ জমিতে আগাম আলু লাগাবেন। এতে লাভ ভাল হবে।

আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে এ ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। রংপুরের অঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক মাস অভাবের মাস। এ সময় অনেক কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না। থাকে না শ্রমিকের মজুরী। হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মজীবি মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। আর্শ্বিন-কার্তিক মাস কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট (ইজজও) বিআর ৩৩, ব্রিধান ৫৭ নামের স্বল্প মেয়াদী জাত আবিষ্কার করেন। এর জীবন কাল ১০৫-১১০ দিন। যেখানে অন্যান্য জাতের জীবন কাল ১৪০-১৫০ দিন। এছাড়া কৃষকরা আমন মৌসুমেও হাইব্রিড ধানের চাষ করছে। অনেকে এই ধানকে বলে মঙ্গার ধান। রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এখন অনেক সচেতন। আগাম আমন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো কিংবা ভুট্টা, ডাল এই শস্য বিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা এখন অনেক অগ্রগামী।

কৃষকরা জানান, আগাম ধান ওঠার পর সেখানে আগাম আলু করলে খরচ কম হবে। ৫/৭ বছর আগেও কৃষকরা দীর্ঘ মেয়াদী জাতের উপর নির্ভরশীল থাকতো। আর্শ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিষ্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর এব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এ কারণেই কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়ে গেছে। কৃষকরাও সুফল পেয়েছে।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৯ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে স্বল্প মেয়াদী ও দেড় হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড আগাম জাতের ধান লাগানো হয়েছে ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, কৃষকদের মাঝে আগাম ফসল উৎপাদনে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা এখন অল্প খরচে বেশি লাভ করতে চায়। তাছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফসল উঠলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কৃষকরা আগাম ধান করার পর আগাম আলু , সরিষা কিংবা ডাল জাতীয় শস্য আবাদ করতে পারবে। কৃষকরাও ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button