আফগানিস্তান: তালেবান দায়িত্ব নেয়ার পর দেশত্যাগী হাজারো আফগান কোথায় যাচ্ছেন, কোন কোন দেশ আশ্রয় দিচ্ছে

তারার আলো অনলাইন ডেস্ক: আফগানিস্তানে দু’দশক পর তালেবানের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসার সময় থেকেই সেখানে অবস্থান করা বিদেশীদের সাথে হাজার হাজার আফগানও দেশ ছাড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
প্রায় ২২ লাখ আফগান ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে এবং আরও প্রায় ৩৫ লাখ আফগান দেশের সীমানার মধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ঠিক কতো আফগান দেশ ছেড়েছে, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এ মূহুর্তে বলা কঠিন – কিন্তু বিমানে করে কতজন দেশ ছেড়েছে তার কিছু হিসেব পাওয়া যাচ্ছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে তারা এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের মতো ব্যক্তিকে কাবুল বিমানবন্দর ব্যবহার করে সরিয়ে এনেছে।
গত ১৪ই অগাস্টের পর থেকে আফগানিস্তানে কেবলমাত্র এই বিমানবন্দরটিই সক্রিয় আছে। তবে এই ৮০ হাজারের মধ্যে কতজন আফগান নাগরিক, তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য এখনও নেই।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে তারা ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়েছে এবং এর মধ্যে আফগান নাগরিকের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি।
অন্য দেশগুলো কতটা সহায়তা করছে?
কিছু দেশ আফগানদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, আবার কিছু দেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে পালিয়ে যাওয়া আফগানদের জন্য তারা ততটা উদার হবে না।
ইরান: আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে শরণার্থীদের জন্য তাঁবু খুলেছে ইরান। ইরানের একজন কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন যে পরিস্থিতি ভালো হলে আফগানদের প্রত্যাবাসন করা হবে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৫ লাখ আফগান আশ্রয় নিয়েছে।
পাকিস্তান: গত জুনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলে তার দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেবে। যদিও জানা গেছে যে অন্তত একটি জায়গায় সীমান্ত খোলা আছে এবং কয়েক হাজার আফগান ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে।
তাজিকিস্তান: আফগান ন্যাশনাল আর্মির সদস্যসহ কয়েকশো’ আফগান সম্প্রতি সীমান্তপথে তাজিকিস্তানে প্রবেশ করেছেন। জুলাইতে দেশটি জানিয়েছে, তারা এক লাখ আফগান শরণার্থী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উজবেকিস্তান: প্রায় দেড় হাজার আফগান শরণার্থী উজবেকিস্তান সীমান্তের মধ্যে তাঁবু গেড়েছেন। এখানে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান।
যুক্তরাজ্য: বিশ হাজার আফগানকে গ্রহণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে প্রথম বছরে পাঁচ হাজার আফগানকে পুনর্বাসন করা হবে, যার মধ্যে নারী, শিশু ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা গুরুত্ব পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র: প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি তহবিলের অনুমোদন দিয়েছেন আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত ঝুঁকিতে পড়া শরণার্থীদের জন্য। তবে ঠিক কত সংখ্যক শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্র নেবে, তা জানানো হয়নি।
কানাডা: কানাডায় ২০ হাজার আফগান শরণার্থীকে গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এর মধ্যে তালেবানের কারণে বিপদে থাকা সাবেক আফগান সরকারের কর্মী এবং নারীনেত্রীরা অগ্রাধিকার পাবে।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে তারা ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পুনরাবৃত্তি চায় না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যেই বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীর ঢেউ থেকে ইউরোপকে সুরক্ষা দিতে হবে। তবে খুব বিপদে থাকা লোকদের তার দেশ সুরক্ষা দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অস্ট্রিয়া কোন শরণার্থী না নেয়ার কথা জানিয়েছে, আর সুইজারল্যান্ড বলেছে যে সরাসরি আফগানিস্তান থেকে আসা বড় সংখ্যক শরণার্থীকে তারা গ্রহণ করবে না।
এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া তিন হাজার এবং আফ্রিকার দেশ উগান্ডাও দুই হাজার আফগান শরণার্থীকে গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে উত্তর মেসিডোনিয়া, আলবেনিয়া এবং কসোভো কিছু শরণার্থীকে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয় দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার আগে পর্যন্ত এসব শরণার্থী সেখানে থাকবে।
তারার আলো/ বিবিসি