ইটভাটার ধোঁয়ায় কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার, সৈয়দপুর (নীলফামারী):
নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিনটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
গত ১৭মে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম হুসাইনের কাছে ওই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কয়া চাঁদমারী এলাকায় সৈয়দপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পশ্চিমে অবস্থিত এআরএস ব্রিকস, এমবিএস ব্রিকস এবং এমএএস ব্রিকসের দূষিত ধোঁয়ার কারণে উঠতি ইরি- বোরো ফসলের ক্ষতিসাধিত হয়েছে।
এতে উল্লিখিত এলাকার মোট ৫৬ জন কৃষকের তিন দশমিক ১৬ একর জমির ইরি-বোরো ধান নষ্ট হয়। আর সরকারের ধান-চাল ক্রয় দর অনুযায়ী কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের মূল্য এক লাখ ৭০ হাজার ৮৫৬ টাকা।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল সৈয়দপুর উপজেলা তিনটি ইটভাটার ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় ইরি- বোরো ধান ক্ষেতের মালিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকার কৃষকদের পক্ষ থেকে কৃষক মো. মতিয়ার রহমান ওই অভিযোগ করেন।
আর ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হুসাইন গত ৯ মে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সেখানে তারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক-কৃষানী ও ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলেন।
পরে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন থেকে অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মো. সালাহউদ্দিনকে আহবায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. আব্দুল লতিফ, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুনীল কুমার দাস, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান সরদার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতা রাউফুর রাহিম।
এ তদন্ত কমিটি সদস্যরা গত ৯ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্তের কাজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তা জমা দেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা, ফসলের জাত, ফসলহানি জমির পরিমাণ ও ফসলে পরিমাণ সহ মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে আগামীতে উল্লিখিত তিনটি ইটভাটার প্রভাব থেকে কৃষকদের ফসল রক্ষায় কয়েক সুপারিশ করা হয়। এ সব সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে ইঁভাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ধানের ফুল আসার আগেই ইটভাটা বন্ধ করা, চলমান ইটের ভাটাগুলোকে ‘হলো’ ইটের ভাটায় রূপান্তরিত করা প্রভূতি উল্লেখযোগ্য।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম তিনটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার কৃষকদের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে (সাত কর্মদিবস) ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এখন উপজেলা প্রশাসন তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন কবরেন।