কুড়িগ্রাম

উলিপুরে টিকা নেয়ার আগ্রহ বেড়েছে, করোনা হয়া হামরা যেন না মরি

তারার আলো খবরঃ
মমতাজ বেগম (৭৬)। বয়সের ভারে নুয়ে গেছেন। লাঠিতে ভর করে প্রতিবেশি
খাদিজা বেগম (৬৫) ও মেলেকজান বেগম (৬৭) এর সহায়তায় এসেছেন টিকা
নিতে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রচারণ মাইকিং শুনে গণ টিকা নিতে আসেন তারা।
রবিবার সকালে উপজেলার বজরা এল কে আমিন ডিগ্রি কলেজ মাঠে দেখা হয় এ
প্রতিবেদকের সাথে। এসময় তাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, করোনা হয়া হামরা
যেন না মরি। এটা নাকি খুব বড় ওগ (রোগ), যাক ধরে তার বগলোত (নিকট) নাকি
ক্যায়ো (কেউ) আইসে না। মল্লেও নাকি ছাওয়া-পোয়ারা মাটি দিবের পায় না।
বয়সে শ্যাষ (শেষ), কয়দিন আর বাঁচমো (বাঁচবো)। আল্লাহ্ যেন হামাক এই
অসুখ থাকি অক্ষে (রক্ষা) করে। মরি গেইলেও ছাওয়া-পোয়া এ্যালাকার মানুষ যেন
মাটি দিবের পায়। টিকা নেয়ার পর অনুভূতি জানতে চাইলে তারা আরো বলেন,
প্রথমে খুব ভয় নাগছিল, সেইজন্যে হামরা সবাই মিলি আসছি, তবে হামার ভয়
কাটি গেইছে। আল্লাহ্ বাঁচি থুইলে পরের বারো হামরা টিকা নেমো।
উপজেলার মধ্য বজরা গ্রামের ছা‌লেহা বেগম (৭৪)। সকা‌লে পুত্র বধু ফরিদা বেগম ও
মেয়ে স্বপ্না বেগমকে নিয়ে টিকা নিতে আসেন। এসময় তারা বলেন, দুরত হইলে
তো যাবারে পাইনং না হয়। শেখের বেটি হাছিনা (শেখ হাসিনা) বাড়ির বগলত
করোনার টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। হামার উপকার হইছে। হামরা দোয়া করি যেন
সারা জীবন ভালো থাকে। খুব ভয়ত আছনু বাহ। টিকা নেয়ার পর আর ভয় নাই। শুধু
মমতাজ, মেলেকজান নয় তাদের মত তবকপুর ইউনিয়নের মাসুদ রানা, রোকসানা
বেগম, ময়না বেগম লাইলী বেগমসহ অনেকে এসেছেন টিকা নিতে।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ে দ্বিতীয়
দিনের মত কোভিড-১৯ এর গণ টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার (৭
আগষ্ট) সারাদেশের মত এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি
ইউনিয়নে ২১ টি বুথে গণ টিকা প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরই
অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনেও (রবিবার) ২১টি বুথের মাধ্যমে ৭টি ইউনিয়নে গণ
টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৬’শ এর অধিক
ব্যক্তিকে টিকা প্রদান করা হবে।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ রেজাউল করিম আমিন বাবুল বলেন, তিস্তা
বেষ্টিত আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ করোনা সম্পর্কে অসচেতন।
সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মেম্বার ও মহল্লাদার-দফাদারদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি
গিয়ে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি পাড়া
মহল্লায় একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। করোনার টিকা নেয়ার জন্য ফ্রি
নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে টিকা অপ্রতুল হওয়ায় সকলকে টিকা প্রদান
করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সূভাষ চন্দ্র সরকার বলেন,
ইউনিয়ন পর্যায়ে লোকজনের মাঝে টিকা গ্রহণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

টিকা স্বল্পতার কারণে সকলকে টিকা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে
সবাইকে টিকা প্রদান করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button