উলিপুরে সফল উদ্যোক্তা মর্জিনা

আব্দুল মালেক,উলিপুর
শুরুটা হয়েছিল ৫টি ছোট কাঁথা দিয়ে। যা দিয়ে কিছু আয় হয় তার। এ থেকেই উদ্বুদ্ধ হন নক্শী কাঁথা তৈরিতে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের সেই নক্শী কাঁথা তৈরি করে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন এক নারী উদ্যোক্তা। নকশী কাঁথা তৈরি করে শুধু নিজে সফলতা অর্জন করেননি বরং এলাকার বিভিন্ন হতদরিদ্র পরিবারের প্রায় ৩’শ ৬০ জন নারী সদস্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এই নারী উদ্যোক্তার নাম মর্জিনা বেগম। বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বামনের হাট গ্রামে।

জানা গেছে, গত ৩বছর আগে মর্জিনা বেগম গ্রামের কয়েকজন নারীকে বাড়িতে ডেকে এনে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শিখিয়ে দিতেন। এরপর তাদেরকে সাথে নিয়ে বাড়িতে বসে নক্শী কাঁথা সেলাই করতেন। সেই কাঁথা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে যা লাভ হত তাই সকলের মাঝে বন্টন করে দিতেন। প্রথমে কেউ আসতে না চাইলেও পরে তার কাছে কাজের জন্য এলাকার বিভিন্ন নারীরা আসতে থাকেন। এরপর নিজ প্রচেষ্টায় অসহায় নারীদের নিয়ে ‘‘তবকপুর মহিলা উন্নয়ন সমিতি’’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। এসব নারীদের নিয়ে নকশী কাথা, বালিশ ও বালিশের কভার, শাল ও শাড়ীতে ফুল তোলা, পাট দিয়ে গয়না, কাপড়ের গয়না, পাপসসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন সামগ্রি তৈরি করে আসছেন। তার কারখানায় প্রতিমাসে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন একেকজন নারী শ্রমিক। যা দিয়ে তাদের সংসার নির্বাহ করার পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার করার সুযোগ তৈরী হয়েছে। তাদের দাবি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মর্জিনা বেগমের মত উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ালে দারিদ্রতম এ জেলায় ক্ষুদ্র শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটার পাশাপাশি সৃষ্টি করবে কর্মসংস্থান। ভূমিকা রাখতে পারবে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
২০১৯ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় অর্ডার পান বেঙ্গল ক্রাফটের সাথে। সেখানে এক বছর কাজ করার পর করোনার কারণে অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০২০সালে ফ্রেন্ডশীফ বাংলাদেশের নদী লিমিটেডের সাথে নতুন করে চুক্তি হয়। এখন তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করছেন তিনি। তার তৈরিকৃত নকশী কাঁথা, শালসহ দৃষ্টিনন্দন সামগ্রি বিভিন্ন মেলায় পণ্য নিয়ে অংশগ্রহন করাসহ ঢাকার বড় বড় শোরুমে নকশী কাঁথা পাওয়া যাচ্ছে।

সোমবার সরেজমিনে মর্জিনা বেগমের কারখানায় গিয়ে দেখা যায় নারী শ্রমিকরা তাদের নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এসব কাজ দেখাশুনা করছেন সংগঠনের উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম।
এসময় কথা হয় কারখানায় কর্মরত লাকি, ইতি ও রুমির সাথে। তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি নকশী কাঁথা তৈরি করেন। জানতে চাইলে তারা এ প্রতিনিধিকে বলেন, একটি করে নকশী কাঁথা তৈরি মজুরী পান ৫’শ টাকা। মাসে ৫-৬ টি কাঁথা তৈরি করে ২ হাজার ৫’শ থেকে ৩হাজার টাকা আয় করেন তারা। যা দিয়ে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারের আয় বর্ধন হচ্ছে।
উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো আমাকে সহযোগিতা করলে আমার ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিসিকের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাকে সাহায্য করলে ৩’শ ৬০ নয়, এ এলাকার অসহায় দরিদ্র সাড়ে ৩ হাজার নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে চান এই অদম্য নারী উদ্যোক্তা।
কুড়িগ্রাম বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মর্জিনা বেগমকে আমরা উদোক্তা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে ১ লক্ষ টাকা ঋন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তার তৈরিকৃত পণ্য সামগ্রি অনলাইনের মাধ্যমে বাজারজাত করণ সহযোগিতা করা হচ্ছে।