নীলফামারী

কিশোরগঞ্জে সারা ফেলেছে নিম, মেহগনির ফলের জৈব বালাইনাশক

শাহজাহান সিরাজ, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): কৃষিতে ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলছে। বাড়াছে উৎপাদন ব্যয়। মাত্রারিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটি, পানি, বায়ু দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশের ও প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জীব-বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। এ সংকট উত্তরণে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে কৃষক দেশীয় পদ্ধতিতে নিম, মেহগনির ফল, বাকল ও পাতা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে নিজ হাতে তৈরি করছেন জৈব বালাইনাশক। এই ভেষজ গুনকে কাজে লাগিয়ে তারা সফলতাও পাচ্ছেন । এই জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজির বিভিন্ন পোকামাকড় দমনের পাশাপাশি ধান ক্ষেতের মাজরা পোকা ও পাতা মোড়া পোকা দমনে কার্যকরী ভ’মিকা রাখছে এ ভোষজ। কীটনাশকের পরিবর্তে এর ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের বাড়তি খরচ।

“সবার জন্য সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ খাদ্য” এই লক্ষ্যে ক্ষতিকর কীটনাশক বিকল্প উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার তুষার কান্তি রায়। তার সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকগণ বাড়িতে মেহগনি ও নিম ফল দ্বারা তৈরি করছেন জৈব বালাইনাশক। কৃষকরা জমিতে প্রয়োগ করে এর সুফল পাচ্ছেন হাতেনাতে। তিনি এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন ব্লকে কৃষকদের নিয়ে করছেন উঠোন বৈঠক। শেখানো হচ্ছে এর তৈরী প্রক্রিয়া। কৃষকগণও এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি এর প্রস্তত প্রণালী সম্পর্কে জানান, মেহগনির ফল, বাকল ও পাতার নির্যাস ২ভাবে প্রস্তত করা যায়। প্রথমত ৩দশমিক৩৫০কেজি মেহগনির ফল, বাকল ও পাতা ভালো ভাবে পিষিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। তারপর ১০ লিটার পানিতে গুড়া গুলোকে নেড়ে দিয়ে ৪-৫দিন জাগ দিয়ে রেখে এরপর মিশ্রনটিকে ছাঁকনি দিয়ে নিয়ে ২০গ্রাম সাবানের গুড়া মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

দ্বিতীয়ত ফরর্মূলা ২- ৩কেজি মেহগনির ফল, বাকল ও পাতা অথবা ২৫০থেকে৩০০গ্রাম ফল বা পাতার গুড়া ৫লিটার পানির সাথে মিশিয়ে তাতে ১০গ্রাম তুত, ৫গ্রাম সোহাগা মিশ্রিত করে ২০মিনিট উচ্চ তাপে ফুটিয়ে নেয়ার পর ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে ২০গ্রাম সাবানের গুড়া মিশিয়ে মিশ্রনের ৫গুন পরিমান পানি মিশাতে হবে। প্রস্ততকৃত জৈব বালাইনাশক ২-৩দিনের মধ্যে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এটি ৭দিন পরপর ৩বার প্রয়োগ করলে ধানসহ ফুলকপি, বাধাকপি, ভুট্রা, টমেটো, শিম ও বরবটি ক্ষেতে প্রয়োগ করে লেদাপোকা ও ইদুর দমন করা যায়। বালাইনাশক তৈরীর পর উচ্ছিষ্টাংশ জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে মাটির স্বাস্থ্যও ভালা থাকে। ওই জৈব বালাইনাশক তিতার কারণে পোকা নাশক হিসেবে কাজ করে। এবং স্প্রে কারী ব্যক্তির কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না।

সরেজমিনে জানা গেছে, পুটিমারী কালিকাপুর গ্রামের নাজমুল ইসলাম ১ বিঘা, পার্শ্ববর্তী গ্রমের আতাউর রহমান ১ বিঘা জমিতে কোন বালাইনাশক স্প্রে না করে নিজ হাতের প্রস্ততকৃত মেহগনির বালাইনাশক স্প্রে করে ধানের মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা দমনে সফলতা বলে স্বীকার করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন,নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জৈব বালাইনাশকের বিকল্প নেই। প্রাকৃতিকভাবে তৈরী জৈব বালাইনাশক বিকর্ষণ হিসাবে কাজ করে। ধানসহ অন্যান্য ফসলে স্প্রে করলে পোকা মাকড়ের জন্য স্বাদ যুক্ত না হওয়ায় ওই ফসলে পোকা আক্রমন করতে পারে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button