খামারীদের করোনাকালীন প্রণোদনার টাকা আত্মসাত গ্রেফতার-১

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:- রংপুরের পীরগঞ্জে করোনাকালীন খামারীদের প্রনোদনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক গ্রাম্য গবাদীপশু চিকিৎসক ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামীর নামে মামলা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পরপরই প্রধান আসামী গ্রাম্য গবাদীপশু চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কয়েকজন খামারীর টাকা আত্ম¥সাতের অভিযোগ করায় মাহবুব মিয়া নামের এক খামারীকে উপজেলা সদরের একটি বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে তিনশত টাকার নন-জুডিশিয়াল ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার মামলা হলে পুলিশ ওই গবাদীপশু চিকিৎসককে গ্রেফতার করে। গত শনিবার উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মেহেদুল ইসলামের ছেলে মতলুবর রহমান (২৯) কে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদপুর্বক অধিকতর তদন্তের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রানী সম্পদ দফতর সুত্রে জানা গেছে, করোনাকালে দেশের ছোট, বড় ও মাঝাড়ী খামারীদেরকে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার লাইভষ্টক এন্ড ডেইরি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) এর আওতায় প্রনোদনা হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নগদ একাউন্ট নম্বরে টাকা প্রদান করে। এরমধ্যে গাভী ও লেয়ার মুরগী, ব্রয়লার মুরগী এবং সোনালী মুরগীর খামারীদেরকে ওই প্রনোদনা দেয়া হয়। উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১ হাজার ৫’শ ১৬জন এবং ২য় পর্যায়ে ৫’শ ৯২জনকে প্রনোদনা প্রদান করা হয়। এতে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
বিশস্ত সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় মাঠ পর্যায়ে খামারীদের তালিকা প্রস্তুত করতে প্রানী সম্পদ বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োজিত এলএসপি’র সদস্যরা (লাইভষ্টক সার্ভিস প্রোভাইডার) নাম তালিকা করে। ওই এলএসপির সদস্যরা কৌশলে প্রকৃত খামারীসহ ভুয়া খামারীর নাম তালিকাভুক্ত করতেই ঘাপলার আশ্রয় নেয়। পাশাপাশি তারা খামারীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি নিয়ে তাদের মাধ্যমেই তাদের নামে সিম উত্তোলন করে মোবাইলের নগদ একাউন্ট খোলার কথা বলে এলএসপির অধিকাংশ সদস্য সীমগুলো নিজেদের কাছে রেখে দেয়। এক পর্যায়ে ওইসব সীমে নগদ একাউন্টে আসা টাকা এলএসপির সদস্যরা তুলে আত্মসাত করে। এছাড়াও উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তাসহ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীও প্রনোদনার টাকা নয়ছয়ে জড়িত বলে খামারীরা অভিযোগ করেছেন। তালিকা অনুযায়ী তদন্ত করা হলে প্রায় কোটি টাকা নয়ছয়ের ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে জানান খামারীরা।
উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের বেতকাপা গ্রামের মাহবুব মিয়া নামের এক খামারীর মোবাইল সীম ব্যবহার করে একই ইউনিয়নের পশু চিকিৎসক মতলুবর রহমান প্রনোদনার টাকা আত্মসাত করে। এ ছাড়াও ওই গবাদীপশু চিকিৎসক আরও কয়েকজনের টাকা আত্মসাত করায় খামারী মাহবুব মিয়া ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে মাহবুব মিয়াকে ফোন করে নিজ বাসায় ডেকে নেন উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আরা বেগম রিনা। পরে ওই বাসায় প্রনোদনার টাকা নিয়ে যেন কোন অভিযোগ না করা হয় সে জন্য মাহবুব মিয়াকে শাসানোর পরে ৩’শ টাকার নন-জুডিশিয়াল ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামী ও কুমেদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক লাল মিয়ার ছেলে মাহবুবার রহমান আলম বলে জানান মামলার বাদী মাহবুব।
ওই ঘটনায় গত শনিবার পীরগঞ্জ থানায় ২ জন সহ আরো অজ্ঞাতনামা অনেকের নামে মামলা করেছেন খামারী মাহবুব। ওই ঘটনায় পুলিশ মামলার আসামী গবাদীপশু চিকিৎসক মতলুবরকে গ্রেফতার করেছেন।
কাবিলপুর ইউয়িনের বিট পুলিশ কর্মকর্তা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রধান আসামীকে আদালতে সোর্পদপুর্বক ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি।
পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, মামলার পর পরই মামলার প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তাজুল ইসলাম তারই অধিনস্ত প্রানী সম্পদ সম্প্রসারন কর্মকর্তা ডাঃ রোকন মিয়ার উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, মাঠ পর্যায়ে এলএসপি কর্মীরা যে তালিকা দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রনোদনার টাকা এসেছে। এ ব্যাপারে আমি জড়িত নই।