খারুভাজ নদীতে ব্রীজ না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই উপজেলার অর্ধলাখ মানুষের বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার

তারার আলো খবরঃ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ গ্রামে খারুভাজ নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে তারাগঞ্জ ও সদর উপজেলার ২০ গ্রামের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছে । এতে দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। খারুভাজ নদীর ওপর সাঁকোটির এক পারে খারুভাজ গ্রাম ও অপর পাড়ে উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম। দুই উপজেলার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মানের দাবী প্রায় দুই যুগের। কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় সেতু না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য এই সাঁকোই ভরসা। তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ গ্রামসহ ১২টি গ্রামের মানুষ ও উপজেলা সদরের ৮টি গ্রামের মানুষের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা বাঁশের সাঁকোর বদলে ব্রিজ নির্মানের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর ব্রিজ নির্মাণ হয় না। গ্রামবাসী জানান, সাঁেকাটি পার হয়ে ১১ গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাতায়ত করে। গ্রাম গুলো হলো খারুভাজ,পশ্চিম সৈয়দপুর, নয়াটারী, বারোঘরিয়া, দোলাপাড়া, পাইকানটারী, আসামীগঞ্জ, চাঁন্দেরপুকুর, পঞ্চায়েতপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, মুন্সিপাড়া, বালাপাড়া। সদর উপজেলার পশ্চিম খারুয়াবাধা, সরকারপাড়া, মোসলেমপুর, মালসেমপুর, আরাজী, কদমতলা, জানপুর ও মুন্সিরহাট। দুই উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষ নিজেদের উৎপাদিত সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপন্য বাজারে সরবরাহে সাঁকোটি ব্যবহার করে। মানুষ কোন রকমে হেঁটে পার হতে পারলেও মালবোঝাই ভ্যান ও মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া কঠিন। খারুভাজ গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, খারুভাঁজ নদীর ওপর বাঁেশর সাঁকোটির পশ্চিম পার্শ্বে পশ্চিম খারুয়াবাধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম খারুয়াবাধা এবতেদায়ি মাদ্রাসা, সৈয়দপুর শিল্পপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিক এবং নদীর ওপারে পুর্ব দিকে রংপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত মোসলেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবি দিলরুবা শাহাদৎ ভি আই পিসেন্টারের হাট উচ্চ বিদ্যালয়, মমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদ, মমিনপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, খারুয়াবাধা দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেশি ভাগেই শিশু। বাঁশের সাঁকো থেকে নদীর গভীরতা অনেক। এ অবস্থায় শিশুরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি পার হয়। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান. পাট ও গম ব্যবসায়ী খারুভাজ গ্রামের হেলাল উদ্দিন এবং পশ্চিম খারুয়াবাধা গ্রামের সেকেন্দার ও তছলেম উদ্দিন একটি ভ্যানে করে আট বস্তা (৭০কেজি ওজনের) ধান বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সাঁকোর এক পাড়ে এসে ব্যবসায়ীরা বস্তাগুলো ভ্যান থেকে নামিয়ে মাথায় করে সাঁকো পার করছেন। অপর পাড়ে গিয়ে আবার বস্থাগুলো ভ্যানে তুলছেন। কথা হলে তারা বলেন, শুধু আমরাই নই, গ্রামের সব কৃষকই এ রকম কষ্ট করে নিজেদের ধান বিক্রি করতে নিয়ে যান। খারুভাজ গ্রামের বাসিন্দা ও সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২২ বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামের মানুষ একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেতু আর হচ্ছে না। কবি দিলরুবা শাহাদৎ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভানুদেব বর্মন, খারুয়াবাধা গ্রামের বাসিন্দা একই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ, লুৎফর রহমান বলেন, খারুভাজ নদীর সেতুর অভাবে দুই যুগ ধরে দুই পারের লোকজন সে¦চ্ছাশ্রমের মাধ্যমে চাঁদা উঠিয়ে বাঁশ ক্রয় করে বাঁেশর সাঁকো তৈরী করলেও সংস্কারের অভাবে সাঁকোটি ভেঙ্গে গিয়ে পারাপার ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ বাবুল জানান, ব্রিজের অভাবে উপজেলার ১২টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ব্রিজ নির্মাণ হলে গ্রামের মানুষের আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে। রংপুর সদর মমিনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা আক্তার কল্পনা এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, উক্ত স্থানে ব্রিজ নির্মানের জন্য বরাদ্দ হয়েছে শুনেছি।
তবে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আহাম্দে হায়দার জামান বলেন, উক্ত স্থানে ব্রিজ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।