
আব্দুর রাজ্জাক: তারাগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিকের পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভবন নিলাম হওয়ায় শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারনে প্রায় সাড়ে বারো’শ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। ফলে লেখাপড়ার মান নিয়ে এলাকায় অভিভাবক ও সচেতন মহলের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট তাদের দাবী বিদ্যালয়গুলোতে শীঘ্রই নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা হলে একদিকে শিক্ষকগন সঠিকভাবে ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে যেমন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবেন অপরদিকে করোনাকালিন সময়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে।
জানা গেছে, গত ৯ আগষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নিলাম কমিটির সদস্য সচিব আঞ্জুমান আরা স্বাক্ষরিত উপজেলার পাঁচটি সরকারি ভবন নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ভবনগুলো হচ্ছে ডাংগীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেড ঘর, ইকরচালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবন, কাঁচনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবন, বাছুরবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেড ঘর ও ধোলাইঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবন। নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২৬ আগষ্ট সকাল ১১ঘটিকায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে এ ভবনগুলো নিলাম হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের নিলামকৃত ভবনগুলোতে ভেঙ্গে ফেলার কাজ চলমান রয়েছে।
বিদ্যালয় গুলো থেকে প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে, শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস নিতে ডাংগীরহাটে ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৫টি শ্রেনী কক্ষ, ইকরচালিতে ২৬১জন শিক্ষার্থীর জন্য ২টি কক্ষ, কাঁচনাতে ৩২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২টি কক্ষ, বাছুরবান্ধায় ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২টি কক্ষ এবং ধোলাইঘাটে ১৬২ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২টি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে।
সরেজমিনে ডাংগীরহাটে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পায় ৫ম শ্রেণীর কোমলমতি ১০২ জন শিক্ষার্থী দু’টি কক্ষে গাদাগাদিভাবে ক্লাস করছে। এসময় ডাংগীরহাটের প্রধান শিক্ষক শামসুদ্দিনেসর সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, করোনার মহামারিতে দেড় বছর পর স্কুল চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার আগ্রহ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন,বর্তমানে শ্রেণী কক্ষ সংকটের কারনে ডাংগীরহাট হাই স্কুল এন্ড কলেজ কক্ষে এভাবে গাদাগাদি করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। আবার যখন সরকারিভাবে প্রতিদিন প্লে থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত ক্লাস নেয়ার নির্দেশ আসবে তখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এতে আরো বিপাকে পড়তে হবে। এভাবেই কথা হয় কাঁচনার প্রধান শিক্ষক দুলালী বেগমের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে ৩২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুইটি কক্ষে পর্যায়ক্রমে ক্লাস নিতে হচ্ছে। করোনার মহামারিতে স্কুল বন্ধের সময় যদি সরকারিভাবে ভবন নির্মান করা হতো তাহলে শ্রেণী কক্ষের সংকটে পড়তে হতো না।
অবশিষ্ট ইকরচালি,বাছুরবান্ধা ও ধোলাইঘাটে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারাও এমন সমস্যার কথা জানিয়ে বলেছেন, যত তারাতারি সম্ভব ভবন নির্মাণ করা না হলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না। ডাংগীরহটের শিক্ষার্থী অভিভাবক শাহাদুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, আকবর আলী কাঁচনার শিক্ষার্থী অভিভাবক অহিদুল হক, লেবু মিয়া, আমজাদ হোসেন সহ নিলামকৃত প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবকের মধ্যে অনেকেই এমন মন্তব্য করেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, বিদ্যালয় গুলোতে নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরু হবে। বর্তমানে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস চলছে তাই সমস্যা তেমন একটা হচ্ছে না।