
তারার আলো খবর:
রংপুরের তারাগঞ্জে তিস্তা বাঁধ সেচ প্রকল্পের এস.থ্রি.বি ক্যানেল সংস্কারের নামে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা হরিলুট করেছেন। দায়িত্বে থাকা পাউবো’র এক উপ-সহকারি প্রকৌশলীর(এসও) বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
পাউবো’র কতৃপক্ষের মাধ্যমে এ ক্যানেলে পানি ছেড়ে দেয়ায় এলাকার সুবিধাভোগী কৃষকগন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ সাড়ে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে যেনতেনভাবে ১ কিলোমিটার ক্যানেল সংস্কারের কাজ করা হলেও এখনো সাড়ে ৫ কিলোমিটার ক্যানেল সংস্কারের কাজ হয়নি।
বরাদ্দকৃত অর্থে ক্যানেল সংস্কারের পুরো কাজ শেষ না করেই চলতি মওসুমে এভাবে পানি চলতে থাকলে যেকোন মুহুর্তে সেচ ক্যানেলের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে ফসলের ক্ষতি সাধন হতে পারে বলে এলাকার কৃষক এমন আশঙ্কায় রয়েছেন।
পাউবো সুত্র জানিয়েছে, চলতি ইরি বোরো মওসুমে তিস্তা বাঁধ সেচ প্রকল্পের তারাগঞ্জ উপজেলার নতুন চৌপথী হতে বুড়ীরহাট পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এস.থ্রি.বি ক্যানেল সংকারের জন্য প্রায় ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। এ কাজের দায়িত্ব পান মেসার্স হাসিবুল হাসান ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা সৈয়দপুর পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) হাফিজুর রহমান ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারি হাসিবুল হাসানের সাথে গোপনে টেন্ডারের টাকার আতাত করে নিজে কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন।
ওই এসও কুর্শা পলাশবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলাম নামে এক লেবার সর্দারকে ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে নাম মাত্র কাজ করে ক্যানেল সংস্কারের কাজ সমাপ্ত করেছেন। সুবিধাভোগী কৃষকদের মধ্যে ঘনিরামপুর বাঙ্গালীপুর গ্রামের জাহিনুর ইসলাম(৫৫), দুলাল মিয়া(৫০), ফেরদৌস সরকার(৬০), আশরাফুল ইসলাম(৩৫), রেজাউল ইসলাম(৩০),
পলাশবাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমান মিজান, মোকছেদুল ইসলাম, দৌলতপুর গ্রামের কৃষ্ণ চন্দ্র রায়সহ একাধিক কৃষকের অভিযোগ, এসও হাফিজুর রহমান নিজেই লেবার-শ্রমিক লাগিয়ে দিয়ে ক্যানেলের মাটি উঠিয়ে মাত্র ১ কিলোমিটার বেড সংস্কারের কাজ করেছেন।
বাকি সাড়ে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে ক্যানেল সংস্কারের কোন কাজেই করা হয়নি। তারা আরো বলেন, এসও হাফিজুর রহমান ক্যানেল সংস্কারের নামে বরাদ্দকৃত প্রায় ২১ লাখ টাকা হরিলুট করেছেন।
সোমবার (৩০ জানুয়ারী)সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ষ্টিমেট অনুযায়ী ক্যানেলের দুই বাঁধের ভাঙ্গা স্থানে ঠিকমতো মাটি ভরাট করা হয়নি। একারনে কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু রয়েছে। উভয় সাইডে ঘাস লাগানো হয়নি। পুরো ক্যানেল জুড়ে পুরাতন বেডে খনা-খন্দে ভরে গেছে।
কোথাও বেডের অর্ধেক নেই আবার কোথাও পুরো বেডটিই নেই। এ অবস্থ্য় পানি চলমান থাকায় বেডের উপরিভাগ পর্যন্ত ক্যানেল টইটুম্বুর হয়েছে। কখন যেন বাঁধ ভেঙ্গে যায়।

এসময় কথা হলে এস. থ্রি. বি ক্যানেলের সভাপতি পাপন কুমার দত্ত এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাকিম জানান, গত কয়েকদিন আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুরের মুখ্য সম্প্রসারন কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম, উপ-প্রধান সম্প্রসারন কর্মকর্তা অমলেস চন্দ্র রায়,পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈয়দপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুর রশিদ,
উপ-প্রকৌশলী মেহেদী হাসান, সম্প্রসারন ওভারশিয়াল শফিকুর রহমানসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এসে নতুন চৌপথীস্থ প্রধান ক্যানেলের সুইচগেট উত্তোলনের মাধ্যমে এস.থ্রি.বি ক্যানেলে পানি ছাড়ার উদ্বোধন করেন ।
ক্যানেল সংস্কার কাজের বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর পাউবো’র সহকারী প্রকৌশলি (এসও) হাফিজুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেচ ক্যানেল সংস্কারের কাজ ভালভাবেই করানো হয়েছে। কাজ বাকি থাকলেও তেমন কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। ,
সৈয়দপুর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন পরিদর্শনে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।