
[ এটি একটি বাল্যবিয়ের বর ও কনের নমুনা ছবি]
তারার আলো খবর:- দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর থেকে করোনা মহামারীর কারণে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। দরিদ্র্যপীড়িত দেশের উত্তরের রংপুর অঞ্চলেরও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সময়টাতে এ অঞ্চলের দরিদ্র ও অশিক্ষিত কিংবা কম শিক্ষিত অনেক অভিভাবক তাদের কন্যা সন্তানকে বোঝা হিসেবেই মনে করেন।
লেখাপড়া বন্ধ থাকায় দিনের পর দিন কন্যা সন্তান বড় হচ্ছিল। সমাজে ও এলাকায় কিংবা পরিবারের বোঝা মনে করতে থাকেন কতিপয় অভিভাবক। পাশাপাশি কন্যা শিশুদের নিরাপত্তার অভাব, যৌতুক প্রথা ও কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিয়ে দিতে বাধ্য হন রংপুরের তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ সহ রংপুর অঞ্চলের বেশ কিছু অভিভাবক।
এক খবরে জানাগেছে, করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুবাদে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। এর পরপরই বিদ্যালয়ে ছাত্রী উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। দেখা গেছে ছাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। কম বয়সেই এসব শিক্ষার্থী এখন স্বামীর বাড়িতে ঘর-সংসার করছে। এলাকাবাসীসহ জনতার দাবি দারিদ্র্যতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ফুলবাড়ি উপজেলা সহ রংপুর অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। কোনোক্রমেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না এ বাল্যবিয়ে।
এদিকে বদরগঞ্জ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পাঠানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাত্র দুই শ্রেণিতে ২০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মা হয়েছেন। মা হওয়ার পথে রয়েছেন আরও চারজন। মিতু আক্তার, জিন্নাত, তানজিলা, খাদিজা ও কাকুলি সবাই দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত বছরের ১৭ মার্চের আগে নিয়মিত ক্লাস করতো তাঁরা। দীর্ঘ ১৮ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর স্কুল খোলার প্রথমদিন এ চিত্র ধরা পড়ে। ওইদিন তাঁরা সবাই অনুপস্থিত। সহপাঠিদের কাছ থেকে শিক্ষকরা জানতে পারেন করোনাকালীন সময়ে তাদের বিয়ে হয়েছে। তারা এখন শ্বশুর বাড়িতে। এদের মধ্যে জিন্নাত মা হয়েছেন, অন্যরাও মা হতে চলেছেন। ওইদিন আরও কয়েকজন দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুপস্থিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর দুই শ্রেণির আরও ১৫জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন বিদ্যালয়ে এসেছে।
অন্যদিকে তারাগঞ্জের তারাগঞ্জ ও/এ বালিকা স্কুল ও কলেজ, তারাগঞ্জ ও/এ সরকারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,ফাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়,চাঁন্দের পুকুর উচ্চ বিদ্যালয়,বরাতি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘনিরাপুর বড়গোলা উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়,ইকরচালী উচ্চ বিদ্যালয়,কাশিয়াবাড়ি স্কুল ও কলেজ,সয়ার কাজীপাড়া স্কুল ও কলেজ,তারাগঞ্জ ও/এ ফাযিল মাদ্রাসা, ওকড়াবাড়ি আলিম মাদ্রাসা সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোরও বেশ কিছু ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান জানান, শিক্ষার্থীদের ইচ্ছা না থাকলেও তাদের অভিভাবকরা স্কুল গুলো বন্ধ থাকায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দিবে ভেবে তারা তাদের কন্যাদের বাল্য বিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আমরা এদের মধ্যে অনেককে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে এ বাল্য বিয়ের কথা জানতে পারছি। এখন আমাদের এদের ব্যাপারে কিছুই করার নেই। তবে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, এখন আমাদের সকল প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ সকল শিক্ষক এবং এলাকাবাসীকে সজাগ থাকতে হবে যেন আর কোন ছাত্রীর বাল্য বিয়ের ঘটনা না ঘটে।