দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা ভবিষ্যতে কোথাও মনোনয়ন পাবেন না-শেখ হাসিনা

তারার আলো অনলাইন ডেস্ক:-আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গেলে কেউই রক্ষা পাবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা ভবিষ্যতে দলের কোথাও মনোনয়ন পাবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতির বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্ব বাড়াতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নারী প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বিচার করে দলের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে অধিক মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দেন। সভায় আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতাকে। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। বৈঠক শেষে রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছাড়াও দুই উপজেলা ও ১০টি পৌরসভার উপনির্বাচন এবং প্রার্থীদের মৃত্যুজনিত কারণে স্থগিত হওয়া বাগেরহাটের দুই ইউপির আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়ে প্রায় আট ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলে। মধ্যহ্নভোজের বিরতির আগে একটি সংসদীয় আসন ছাড়াও ১০ পৌরসভা ও দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এরপর রাত অবধি নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে ৪ হাজার ৪৫৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়। প্রথমে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। সব বিভাগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন বোর্ডের সভা আরো দু-এক দিন চলতে পারে। আজ শুক্রবার সকালে আবারও মনোনয়ন বোর্ডের সভা বসবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সদস্য মো. হাসিবুর রহমান স্বপন গত ২ সেপ্টেম্বর মারা গেলে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। মেরিনা জাহান কবিতা সাবেক এমপি ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামের বোন। এই উপনির্বাচনে চয়ন ইসলামও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাদের পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মযহারুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলা একাডেমির প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেরিনার চাচা আব্দুল খালেক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চয়ন ইসলামের বোন মেরিনা জাহান কবিতাকে মনোনয়ন দেওয়ার পেছনে বড় একটা কারণ রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগের নারী নেতৃত্ব কম। বগুড়ায় একজন ছাড়া এ বিভাগে আর কোনো নারী সংসদ সদস্য নেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পছন্দের শীর্ষেও ছিলেন তিনি। অন্যদিকে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। তবে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা জাপার সভাপতি মোক্তার হোসেন। উপজেলা জাসদের সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিও প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন পেলেন আরো যারা :বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মো. রেজাউল করিম (মন্টু) এবং টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় মোছা. নার্গিস বেগম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ১০টি পৌরসভার মধ্যে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে মো. ইউনুছ আলী, নীলফামারী জেলার ডোমারে গণেশ কুমার আগরওয়ালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর পৌরসভায় মো. মোখলেসুর রহমান, বগুড়ার সোনাতলায় মো. শাহিদুল বারী খান, নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, নরসিংদী জেলার ঘোড়াশালে মো. আল মুজাহিদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায় মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আকন্দ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায় মো. গোলাম হাক্কানী, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ায় মোহাম্মদ মোস্তফা, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে মো. রফিকুল আলম (কামাল) মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া মোরেলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মো. সাইদুল রহমান এবং রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউপিতে মোসা. সুলতানা পারভীন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
মনোনয়ন বোর্ডের দুই জন সদস্য বলেন, উপজেলা-পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অতীত কর্মকাণ্ড, দলের জন্য ত্যাগ, করোনাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছেন, সেই সব ত্যাগী নেতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নারী নেতৃত্ব বাড়াতে অনেক ইউনিয়ন পরিষদে নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এমনকি যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোনয়ন চেয়েছেন, তাদের মধ্যে মাঠ জরিপে যাদের অবস্থান ভালো পাওয়া গেছে তাদেরও মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। তবে বিগত সময়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এমন কাউকেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অতীতে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নেতা যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, তাদের আর নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের জনপ্রিয় নারী নেত্রীদের বেশি করে মনোনয়ন দেওয়া হবে।
সূত্র: ইত্তেফাক