জাতীয়নীলফামারী

নওগাঁয় বিলের নিচু এক শ’ বিঘা জমিতে বিলুপ্তপ্রায় লক্ষ্ণীদীঘা ধানের চাষ: মিলেছে আশানুরূপ ফলন

নওগাঁ থেকে ফিরে স্টাফ রিপোর্টার, সৈয়দপুর (নীলফামারী):
নওগাঁয় বিলবেষ্টিত নিচু এক শত বিঘা জমিতে স্থানীয় বিলুপ্তপ্রায় লক্ষ্ণীদীঘা ধানের আবাদ হয়েছে। আর এ পরীক্ষামূলক চাষাবাদে ফলনও হয়েছে প্রায় আশানুরূপ। প্রতি বিঘায় ফলন মিলেছে প্রায় ৫ মন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় দেশে লক্ষ্ণীদীঘা, বালাম, কালোজিরা, হিজলদীঘাসহ নানা রকম স্থানীয় জাতের ধান চাষাবাদ হতো। আর এসব ধানের চালের ভাত সুগন্ধি ও অত্যন্ত মিষ্টি। জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর জীবদ্দশায় লক্ষ্ণীদীঘা ধানের চালের ভাত পছন্দ করতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের কারণে আজ স্থানীয় জাতের ধান বিলুপ্ত হতে চলেছে।

আর এ সব বিলুপ্তপ্রায় জাতের ধানের আবাদ ফিরিয়ে আনতে নিরলস ও নিরন্তর চেষ্টা করছেন দেশের কয়েকজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। এদের মধ্যে রয়েছেন নওগাঁ সদরের পার নওগাঁর হাসান জামান সিদ্দিকী ও সৈয়দপুরের আহসান-উল হক বাবু।

কৃষি উদ্যোক্তা নওগাঁ সদরের পার নওগাঁর বাসিন্দা হাসান জামান সিদ্দিকীর চেষ্টায় এবারে সদর উপজেলার দুবইলহাটি ইউনিয়নের হাড়িয়াগাছী এলাকাটি একটি বিলবেষ্টিত। বিলের নিচু জমিতে শুধুমাত্র ইরিবোরো ধান চাষ হয়। ফলে বিলবেষ্টিত এ সব জমি ছয় মাসের বেশি সময় পড়ে থাকতো। আর যেহেতু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা রয়েছে দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও পড়ে না থাকে।

আর তাই তাঁর নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমি হাড়িয়াগাছী এলাকার বিলের নিচু জমিতে পানি সহিষ্ণু জাতের লক্ষ্ণীদীঘা ধানের আবাদের পরিকল্পনা গ্রহন করি।

তিনি (হাসান জামান সিদ্দিকী) জানান, ২০২১ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুরের কৃষি উদ্যোক্তা আহসান-উল হক বাবু’র মাধ্যমে গোপালগঞ্জ থেকে ১২০ কেজি লক্ষ্ণীদীঘা ধানের বীজ সংগ্রহ করা হয়। গত ২০২১ সালে হাড়িয়াগাছী এলাকার নিচু জমিতে লক্ষ্নীদীঘা ধানের আবাদ করা হয়েছিল।

তাতে আশাতীত সফলতাও আসে। ওই বছর অল্প পরিসর জমিতে তা চাষাবাদ করে ১৭ মন ধান পাওয়া গেছে। সে সরের পুরোটাই বীজ ধান হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। তাই এবারে এলাকার ৪০জন কৃষকের প্রায় এক শত বিঘা জমিতে লক্ষ্ণীদীঘা জাতের ধানের আবাদ করেছি।

গত জুন মাসের প্রথম দিকে শুধুমাত্র এক দফা জমি চাষ দিয়েই লক্ষ্ণীদীঘা জাতের ধানের ওই বীজ জমিতে বপন করা হয়। সার, কীটনাশকের কোন রকম ব্যবহার ও পরিচর্যা ছাড়ায় এ ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।
হাসান জামান সিদ্দিকী বলেন, একেবারে অল্প খরচে আমাদের দেশে নিচু জমিতে স্থানীয় বিলুপ্তপ্রায় জাতের ধান আবাদ করা সম্ভব। সার, কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বিলবেষ্টিত জমিতে লক্ষ্ণীদীঘা জাতের ধানের চাষ করা হচ্ছে।

ফলে বিলের মাছের উৎপাদনও অপেক্ষাকৃত বেশি হচ্ছে। আর লক্ষ্ণীদীঘা জাতের ধানের চালে অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে। ভাত খেতেও অনেক মিষ্টি। তাছাড়া এ ধানের চালের ভাতও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তিনি দেশের বিলুপ্তপ্রায় সব জাতের ধান চাষ ফিরিয়ে আনতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে, গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল নওগাঁ সদর উপজেলার দুবইলহাটি ইউনিয়নের হাড়িয়াগাছী এলাকা সংলগ্ন বিলবেষ্টিত জমিতে আবাদকৃত বিলুপ্তপ্রায় লক্ষ্ণীদীঘা ধানের কর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবদি মো. সামসুল ওয়াদুদ।

এ সময় নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন, নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা নাজনীনসহ কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও সেখানে আরো অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের কৃষিবিদ লুৎফুল বারী আল ওসমানী, সৈয়দপুরের কৃষি উদ্যোক্তা আহসান-উল হক বাবু, সমাজসেবক আফাজ উদ্দিন সরদার, কৃষি গবেষক মো.
মুরাদ, দুবইলহাটি ইউপি’র ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল খালেক প্রমূখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button