পাত্রী দেখানোর নামে প্রতারণা,সৈয়দপুরে আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের এক সদস্য গ্রেপ্তার

সৈয়দপুর:- প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার(৫১)। ছবি:-প্রতিনিধির পাঠানো
স্টাফ রিপোর্টার, সৈয়দপুর (নীলফামারী):
ছোট ভাইয়ের পাত্রী দেখানোর কথা বলে আটকে রেখে বেদম মারপিট এবং দুইটি মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলতে বাধ্য করে কামরুল হাসান ওরফে দুলাল (৩৭) নামের এক ব্যক্তি কাছ থেকে জোরপূর্বক ৭২ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
রংপুর থেকে নিয়ে এসে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিমবাগান এলাকায় এক বাসায় এ প্রতারণার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগারকে (৫১) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে শহরের শেরে বাংলা সড়কের চৌধুরী টাওয়ার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পাকাধরা গ্রামের মকবর আলীর ছেলে। সে আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের পীরগাছা পারুল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চালুনিয়া গ্রামের মো. রুস্তম আলীর ছেলে কামরুল হাসান ওরফে দুলাল (৩৭)। একই এলাকার মো. বাদল (৪৫) বন্ধু হয় তার (দুলাল)। দুলাল তার ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেনের (২২) বিয়ের পাত্রী দেখার জন্য বন্ধু বাদলকে বলেন।
এ অবস্থায় বাদল গত প্রায় এক মাস আগে দুলালকে রংপুর মাহিগঞ্জের সাতমাথায় এক মহিলার সঙ্গে কথা বলার জন্য নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানে ওই মহিলার সঙ্গে দুলালের পরিচয় করে দেয় প্রতারক চক্রের সদস্য মো. বাদল।
এ সময় তাদের মধ্যে মোবাইল নম্বর আদান প্রদান হয়। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই অজ্ঞাত মহিলা মোবাইল ফোনে দুলালকে জানায় তাঁর ভাইয়ের জন্য অনেক পাত্রী (কণে) দেখেছেন তিনি ( ওই জনৈক মহিলা)। ঘটনার দিন গত ২৮ অক্টোবর ওই অজ্ঞাত মহিলা মোবাইল ফোনে দুলালকে প্রথমে রংপুরের মাহিগঞ্জে ডেকে আনে।
পরে তার ভাইয়ের পাত্রী দেখার উদ্দেশ্যে রংপুর থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিমবাগান এলাকায় নিয়ে এসে নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগারের ভাড়া বাসার একটি ঘরে বসিয়ে রাখেন। এরপর সেখানে দুইজন্ অজ্ঞাত মেয়েকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক তাদের পাশে বসিয়ে জোর পূর্বক বিভিন্নভাবে ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়।
এ সময় দুলালের সঙ্গে থাকা নগদ ২২ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয় । অতঃপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার ওই ঘরে ঢুকে নিজেকে গোয়েন্দা ( ডিবি) পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুলালের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
এতে দুলাল অস্বীকৃতি জানালে প্রতারক চক্রের প্রধান টাইগারসহ অন্যান্যরা তাকে বেদম মারপিট করতে থাকে। এ সময় দুলাল জীবন বাঁচাতে তাঁর কাছে থাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও পাসওয়ার্ড বলে দেয় তাদের।
পরবর্তীতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুলালকে ওই ঘরে আটকে রেখে ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে গিয়ে দুলালের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেয়। এরপর আবারও ওই নিমবাগানের বাসা ফিরে দুলালকে ওই বাসা থেকে বের করে দেয়।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় কামরুল হাসান ওরফে দুলাল নিজে বাদী হয়ে নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার,পীরগাছার মো. বাদল, টাইগারের স্ত্রী মোছা. সহিদা খাতুন ও জলঢাকার জনৈক দেবসহ অজ্ঞাতনামা ৫জনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৩৪২/১৭০/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬/৩৪ ধারায় করা মামলা নং ২৬, তারিখ: ২৯/১০/২০২১ইং।
এ মামলা দায়ের পর পরই সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়ে উঠেন। এরপর ইলেকট্রনিক্স ডিভার্সের সাহায্যে মামলার প্রধান আাসামী নাজিমুল ইসলাম টাইগারের অবস্থান নিশ্চিত হয়।
পরে ওই দিন রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে সৈয়দপু থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) খায়রুল আনামের নেতৃত্বে এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সাহিদুর রহমান সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে শহরের শেরে বাংলা সড়কের চৌধুরী টাওয়ার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান, প্রতারণা মামলার প্রধান আসামী নাজিমুল ইসলাম ওরফে দুলালকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান গ্রেপ্তারকৃত আসামী টাইগারকে গত শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।