
: আব্দুর রাজ্জাকঃ – রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাঁরুভাজ নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় দুই একর জমিতে তাইওয়ান কিং জাতের হাইব্রিড পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে। পেঁপের এই ক্ষেতটি লাগিয়েছেন উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের নদীর পাড় গ্রামের কৃষক আছাদুল হক। বর্তমানে হাট-বাজারে এই পেঁপে বেশী দামে বিক্রি করতে পেরে কৃষক আছাদুলের মুখে হাসি ফুটেছে।
আছাদুল হক জানান, রংপুর দিনাজপুর মহাসড়কের সলেয়াশাহ বাজার নামক স্থানে আছাদুলের একটি সার ও কীটনাশকের দোকান ছিলো। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এ ব্যবসা করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। দোকান চালানোর পাশাপাশি শাক- সবজি আবাদ করার অভ্যস্ত ছিলো তার। তবে ২০১৬ সালে রংপুর সদরের ঠাকুরপাড়ায় তান্ডব চালিয়ে হত্যাসহ ঘরবাড়ি জ্বালানোর ঘটনায় দুটি মামলায় প্রায় ১ হাজার জন ব্যক্তির মধ্যে আছাদুল হকও মামলায় জড়িয়ে পড়ে পুলিশের হাতে ধৃত হন এবং জেল হাজত খাটেন। মামলার ফাঁদে পড়ে অনেকটাই নিঃস্বের পথে আছাদুল হক ব্যবসার হাল ছেড়ে দিয়ে গত বছর নিজস্ব ৩৫ শতক জমিতে পেঁপে চাষ করেন এবং ৫০ হাজার টাকা লাভ করেন। তাই তিনি এবারে পেঁপে চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
নিয়েছেন ২ একর জমি বর্গা। জমি তৈরীর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে ওই ২ একর জমিতে রোপন করেছেন ১হাজার পেঁপের চারা। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫ ফিট দুরত্বে ফুল ও ফলে ধরা পেঁপে গাছগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৫ থেকে ৬ ফিট লম্বা ঝোপালো প্রত্যেক গাছে আধা কেজি থেকে এক কেজি ওজনের প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি করে পেঁপে ধরেছে। কৃষক আছাদুল হক জানান, বারো মাসি এই পেঁপের চারা রোপনের বয়স সাত মাস। চার মাসের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল ধরা শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তিন মাসে পেঁপে ( কেজিতে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে) বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। হাট-বাজারে এরকম দাম থাকিলে আগামী পাঁচ মাসে আরো ২লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করা য়াবে। পেঁপের চারা প্রতি পিচ ২৫ টাকা দরে ১ হাজার চারা ক্রয়ের দাম ২৫ হাজার টাকাসহ জমি বর্গা নেয়া, জমি তৈরী, গোবর সার ও রাসায়নিক সার, চারা রোপন, কীটনাশক প্রযোগ আর পরিচর্যায় বর্তমান পর্যন্ত পেঁপে ক্ষেতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পেঁপের এরকম দাম থাকলে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ করা যাবে বলে কৃষক আছাদুলের স্বপ্ন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাস্সুম জানান, পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু ফল। এই ফল খেলে বিভিন্ন রোগের উপকার হয় বলে রোগীদের পথ্য হিসেবে এটি ব্যবহার হয়। বাড়ির আনাচে কানাচে এবং ভিটে মাটির আইলে পেঁপে গাছ লাগাতে কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে থাকি। এছাড়াও হাট-বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় পেঁপে চাষ বর্তমানে একটি লাভজনক বব্যবসায় পরিনত হয়েছে।