রংপুর

ভাঙ্গছে নদী, পুড়ছে কপাল

কমল কান্ত রায়, গঙ্গাচড়া (রংপুর)

ভাঙ্গছে নদী পুড়ছে কপাল। তিস্তা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আজ নিঃস্ব করেছে মানুষকে। বিনবিনা এলাকার সুজা মিয়া। জমাজমি,ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে বিনবিনা সরকারি প্রাথমি বিদ্যালয়ের পাশে ঘর তুলে বসবাস করছে। একই এলাকার সাইয়াদুল সহায়-সম্বল হারিয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে কাকিনা এলাকার মহিসামুড়িতে বাস করছে। ছয়বার নদী ভাঙ্গনের শিকার নুর ইসলাম নাড্ডা(৮০)। বাড়ি উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রামে। জায়গাজমি নদীতে গেছে । জমাজমি হারিয়ে আলম বাদশা(৬০) এখন বাস্তহারা।একে একে তার ৭/৮ বিঘা জমি তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর একটু শান্তির জন্য নদী থেকে কিছু দুরত্বে একটি ঘর তুলে বসবাস করলেও সম্প্রতি তিস্তার ভাঙন এসে লেগেছে তার ঘরের কোণায়। ভাঙন থেকে দুরে থাকতে চাইলেও ভাঙন তার পিছু ছাড়ছে না।
উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান গ্রামে ঘর তুলে বাস করছে আলম বাদশা। স্ত্রী বুলবুলি বেগমকে সাথে নিয়ে তার ৮ জনের সংসার। ছেলে ৩ জন মেয়ে ৩ জন। এক সময় বাড়ি ছিল তিস্তা নদীর চরে। জমা-জমি ভালই ছিল। সুখ ছিল ঘরে। পুকুরের মাছ, গোয়ালে ছিল গরু। কিন্তু সবকিছু আজ কালের স্বাক্ষী। রাক্ষসী তিস্তার করাল গ্রাসে নিয়তির কঠিন কষাঘাতে নিঃস্ব বাদশা আজ। সহায়-সম্বল হারিয়ে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। মলিন বসন। বাদশা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,
“ঔ যে দেখছেন না ঔখানে বাড়ি আছিল। ২/৩ বছরে কি থেকে কি হয়ে গেল। জীবনে ৫ বার বাড়ি ভাংছি, এলা এটে আছি। অন্যের জমিতে কাজ করি।


গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড় গ্রামের আব্দুল মজিদ আবাদী জমি বলতে ছিল তার ৭ একর জমি। বেশ সুখে-শান্তিতে ছিল তার পরিবার। তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনে সব জমিই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মজিদ এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের জমিতে বাস করছে।
সুজা,বাদশা , মজিদ আর সাইয়াদুলের মত হাজার হাজার পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেক অবস্থা সম্পন্ন কৃষক এখন দিন মজুর, রিকসাচালক কিংবা হোটেল শ্রমিক। হতদরিদ্রের খাতায় উঠছে তাদের নাম। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত তিস্তার ভাঙ্গনে কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে তার সঠিক হিসেব না থাকলেও প্রতিবছর ২/৪শ পরিবার গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙ্গনে সর্বহারা হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা অফিসের এক হিসেব মতে শুধু এ বছর প্রায় ২শ পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে প্রতিবছর ঘর বাড়ি, বিদ্যালয়, আবাদি জমি ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙ্গছে। থেমে নেই ভাঙ্গন। নদীতে বিলীন হচ্ছে স্বপ্ন। বাড়ছে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা। শেষ নেই দুর্ভোগের।
বর্ষায় তিস্তার ভয়ালরূপ হলেও শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছর পলি জমতে জমতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর বুক। ফলে বর্ষায় সহজে ভরে যায় নদী, ভাঙ্গে এ কুল, ও কুল আর পুড়ে যায় মানুষের কপাল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button