নীলফামারীরংপুরলালমনিরহাট

ভারতে বন্যা, তিস্তায় রেড অ্যালার্ট, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে

নীলফামারী সংবাদদাতা:- ভারতের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে। এতে তিস্তা নদীবেষ্টিত জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ভেঙে গেছে তিস্তা ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের একটি বাঁধ। হুমকির মুখে অন্য বাঁধগুলোও।

বুধবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা যায়। সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড অ্যালার্ট (লাল সংকেত) জারি করে তিস্তার আশপাশের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভেঙে গেছে ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস বাঁধ। ওই এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।

হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় নদীতীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েও তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে তিস্তা ব্যারেজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা ডালিয়া পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই পানি ১০৭ সেন্টিমিটার বেড়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, এলাকার জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডান তীর ও গ্রোয়েন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে গ্রোয়েন বাঁধটির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই বাঁধটি ভেঙে গেলে ডান তীর বাঁধসহ এলাকার শত শত ঘরবাড়ি তিস্তার পানিতে ভেসে যাবে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘পরিস্থিতি খুব খারাপ। এরই মধ্যে তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলের জমি সব পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদে সরে গেছে।’

খালিশাচাঁপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘কার্তিক মাসের এমন হঠাৎ বন্যা এলাকাবাসীকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। এলাকার ছোটখাতা, বাইশপুকুর, সুপারীপাড়া গ্রাম এখন নদীতে পরিণত হয়েছে।’

ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ‘ভেন্ডাবাড়ি ছাতুনামা ফরেস্টের চর এলাকার ওপর দিয়ে এখন তিস্তা নদীর পানি বয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়িতে গলা সমান পানি। এ ছাড়া নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ২২টি চরের ৫০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।’

হঠাৎ তিস্তায় পানি বেড়ে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

চরাঞ্চলের রমজান আলী বলেন, ‘রাতে হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাবে ভাবতে পারিনি। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব, ভেবে পাচ্ছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আগে কোনো রকম ঘোষণা দেয়নি যে বাড়ি থেকে সরে যেতে হবে। পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে আছি।’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা প্রিন্স বলেন, ‘উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেকোনো সময় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ বিধ্বস্ত হতে পারে। আমরা তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত দিয়ে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button