লেখকের চিঠিপত্রঃ একজন মহিলার দৈনিক ৬০০ টাকা ইনকাম থেকে ৩০০ টাকা লাভ হলে, একজন পুরুষ লোকের জুয়া খেলে ৬০০ টাকা ইনকাম থেকে কত টাকা লাভ হয়?

পাঠক আপনারা নিজেরাই উল্লিখিত প্রশ্নের সমাধান বের করতে থাকুন। আর আমি বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এর সমাধানের চেষ্টা করি। ব্র্যাকে চাকরির সুযোগে, কোন একদিন আমি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় এক মহিলার ইনকাম সোর্স যাচাই করতে তার বাড়িতে যাই। তিনি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি পিচ ৩ টাকা দরে মহিলাদের শায়া সেলাই করেন। শায়া সেলাই থেকে তার দৈনিক কত টাকা আসে? জিজ্ঞাস করলে তিনি উত্তর দিলেন, প্রতি পিচ শায়া ৩ টাকা দরে দৈনিক ২০০ পিচ শায়া সেলাই করে ৩০০ টাকা লাভ হয়। হিসাবটা আমার কাছে গড়মিল মনে হওয়ায় তাকে বললাম, ৩ টাকা দরে ২০০ পিচ সেলাই করলে আপনারতো দৈনিক ৬০০ টাকা থাকার কথা। এবার তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, প্রতিদিন আমার মজুরির দাম ৩০০ টাকা । ৬০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বাদ দিলে ৩০০ টাকা থাকে। আর এটাই আমার লাভ। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন তার মজুরির অতিরিক্ত ৩০০ টাকা তার লাভ। আর যেদিন তিনি কোন কাজ না করেন সেদিন তার ৩০০ টাকা ক্ষতি। হিসাবটা জটিল মনে হলেও এটাই বাস্তব।
এবার আসাযাক একজন পুরুষ লোকের জুয়া খেলে ৬০০ টাকা ইনকাম থেকে কত টাকা লাভ হয়? জুয়া খেলে ৬০০ টাকা ইনকাম করলে ঐদিনেই তার সাঙ্গপাঙ্গরা ২০০ টাকার চা-নাস্তা খেয়ে ফেলে। সেদিন তার বন্ধু- বান্ধবের অভাব থাকে না। তিনি হয়ে যান সেদিনের জন্য শ্রেষ্ঠ ত্রানকর্তা। মহিলার সূত্র অনুয়ায়ী জুয়ারুর শ্রমের দাম ৩০০ এবং নাস্তা বাবদ খরচ ২০০ টাকা বাদ দিলে তার ঐ দিনের লাভ থাকে ১০০ টাকা। আর যেদিন তিনি ৬০০ টাকা হেরে যান সেদিন তার ক্ষতি হয় ৯০০ টাকা। যা তিনি উপলব্ধি করতে পারেননা। এভাবে একসময় তাকে ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব হতে হয়। রোগে আর শোকে রাতের আরামের ঘুম হারামে পরিনত হয়। নব্বই এর দশকে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর মুন্সিপাড়ায় সেকেন্দার নামে একজন লোক বাস করতেন। ধনে-সম্পদে তিনি এলাকায় সেকেন্দার বাদশা নামে পরিচিত ছিলেন। তার এলাকার বাসিন্দা ক্ওাসার ভাইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, সেকেনদার বাদশা নিয়মিত জুয়া খেলতেন। লোকজন তাকে জুয়া খেলতে নিষেধ করলে তিনি জবাবে বলতেন, আমি আর জুয়া খেলবনা। তবে গতকাল জুয়া খেলে যে টাকা হেরেছি তার আসল উঠানোর জন্য যাচ্ছি। এভাবে দিন যায় বছর যায় কিন্ত সেকেনদার বাদশার আসল টাকা ওঠেনা। তার জুয়া খেলাও বন্ধ হয়না। একসময় জমি-জমা, ধন-সম্পদ বিক্রি করে জুয়া খেলে সেকেনদার বাদশা থেকে ফকিরে পরিণত হলেন। মদ,জুয়া সেকানদারের মত কত হাজারো বাদশাকে যে ফকিরে পরিণত করেছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। শুধু তাই নয় জুয়ারু পিতার জন্য সন্তানকে এবং জুয়ারু সন্তানের জন্য পিতা-মাতাকে সমাজে এমনকি আত্মীয় স্বজনের কাছে হতে হয় হেয় প্রতিপন্ন। জুয়া খেলে ধনী হয়েছে এরকম নজির দেশের কোথাও নেই। তাই ডিজিটাল সহ সকল প্রকার জৃয়া বন্ধের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক- মোঃ আব্দুর রউফ মাসুদ
ঘনিরামপুর তারাগঞ্জ রংপুর