সাহিত্যিক অধ্যাপক আলীম উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার,রংপুর
রংপুরের কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান, লেখক, সাহিত্যিক, ও গুণীশিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ আলিম উদ্দিনে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল তিনটায় রংপুর নগরীর হোমিওপ্যাথিক কলেজ সংলগ্ন নুরপুর ছোট কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে বাদ যোহর জেএনসি নুরপুর জামে মসজিদ মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মুহম্মদ আলিম উদ্দিন বুধবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি এক ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তান, নাতি-নাতনি, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গত ৮ আগস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মুহম্মদ আলীম উদ্দীন কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অর্জন করেছেন ২০০০ সালের শ্রেষ্ট শিক্ষকের সম্মান। রংপুর প্রেসক্লাবের চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন স্মৃতি পদক, শিক্ষাবিদ হিসাবে তাঁর অনন্য প্রাপ্তি রয়েছে। তিনি রংপুর সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
এছাড়াও তাঁর অর্জনের তালিকায় রয়েছে নাগরিক নাট্যগোষ্ঠী-২০০১, ছন্দসিক ২০০২ ও জলুবার ২০০২ সাহিত্য পদক নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন পদক ২০০৪, সাধক কবি হেয়াত মামুদ পদক ২০০৬, শ্রেষ্ঠ বেতার ব্যক্তিত্ব পদক ২০০৮, সরকারি কর্মচারী পরিষদ পত্রিকা কর্তৃক শ্রেষ্ঠ্য রম্য রচনা পদক ২০০৬, রংপুর পৌরসভা কর্তৃক শিক্ষাবিদ পদক ২০০৯ এবং শিক্ষাবিদ পদক ২০১১, একুশে বইমেলা সম্মাননা স্মারক ২০১০, খেরাজ আলী স্মৃতি পদক ২০১৭, সম্মিলিত লেখক সমাজ কর্তৃক গুণিজন সম্মাননতা ২০১৭, ক্রাউন সিমেন্ট গুনিজন সংবর্ধনা ২০১৬, নিউইয়র্ক প্রবাসী শিক্ষার্থী কর্তৃক গুণিজন সম্মাননা ২০১৭ সহ আরও অনেক সম্মাননা।
মুহম্মদ আব্দুল আলিম উদ্দীন এর জীবনী বাংলা একাডেমি লেখক অভিধানের আন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। অবসর জীবনে তিনি লেখালেখিতে নিবেদিত ছিলেন। তাঁর লেখা সাহিত্য, কাব্য, প্রবন্ধ ও ছড়ার অনেক বই রয়েছে। তিনি গবেষণাধর্মী লেখক ছিলেন।
মুহম্মদ আলীম উদ্দীনের জন্ম রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার বারোবিঘা গ্রামে। তাঁর বাবা মরহুম মজেতুল্লহ, মা মরহুমা আজিমুন্নেছা। বর্তমানে রংপুরের নুরপুর এলাকার নিভৃত নিলয় নিবাসে তিনি বসবাস করতেন।
এদিকে বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে রংপুরের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুহম্মদ আব্দুল আলিমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে শোক প্রকাশ করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।