সৈয়দপুরে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক

আইপিএম মডেল ইউনিয়ন বোতলাগাড়ী
স্টাফ রিপোর্টার, সৈয়দপুর (নীলফামারী):
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী আইপিএম মডেল ইউনিয়নের কৃষকেরা পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পে মাধ্যমে চাষাবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এতে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি ফলনও মিলছেন আশানরূপ। মানুষ পাচ্ছে বিষমুক্ত শাকসবজি। সেই সঙ্গে রক্ষা হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০টি উপজেলায় ২০টি ইউনিয়নে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প গ্রহন করেছে। আর ইউনিয়নগুলোর নামকরণ করা হয়েছে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) মডেল ইউনিয়ন।
ওই প্রকল্পের অধীনে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ৪ নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নকে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন ঘোষনা করা হয়। এখানকার ৫শ’ কৃষক-কৃষাণীকে বাছাই করা হয়েছে। তাদের নিয়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী দল গঠন করা হয়। প্রতি গ্রæপে ২৫ জন করে ২০টি গ্রæপ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ছাড়াই ফসল উৎপাদনের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিজন কৃষকের ন্যূনতম ২০ শতক জমিতে জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটগুলোতে কৃষকেরা চলতি রবি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকফি,শসা, বেগুনসহ বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করেছেন। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি প্রদর্শনী প্লটের জন্য কৃষকদের বীজ,সার কৃষি উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষে পরামর্শ তথা নানা রকম দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
এতে প্রতিটি কৃষকদের জমিতে করা প্রদর্শনী প্লটে সবজির আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বর্তমানে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সে সব সবজি বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
সোমবার সরেজমিনে বোতলাগাড়ী আইপিএম মডেল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সবজি ক্ষেতগুলোর ক্ষতিক্ষর পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, আঠালো,হলুদ ফাঁদ,আঠালো নীল ফাঁস শোভা পাচ্ছে। কোথাও কোথাও নেট হাউজও দেখা যায়। আর কৃষকদের মধ্যে কেউ কেউ সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউবা সবজি ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ সময় সেখানে কথা হয় বোতলাগাড়ী কবিরাজপাড়ার কৃষক দ্বিনেশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে এ প্রতিনিধি’র। তিনি জানান, বাড়ির পাশের জমিতে বরাবরই আগাম জাতের ফুলকফি, বাঁধাকফি,বেগুন, মূলা, শিমসহ নানা রকম সবজি চাষাবাদ করেন।
আগে এ সব সবজি চাষাবাদে তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক তথা বালাইনাশক ব্যবহার করতেন। কিন্তু চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি চাষে জৈব সার ও জৈবিক বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন তিনি। কোন রকম রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়নি।
তারপরও সব রকম সবজিরই ফলন মিলছে আশানুরূপ। তিনি জানান, তাঁর এক বিঘা জমিতে ফুলকফি চাষে তাঁর মোট ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। আর তিনি ওই জমির ফুলকফি বিক্রি করেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সবজির পাইকারেরা তাঁর জমিতে এসে সবজি কিনে ট্রাক, পিকআপে করে নিয়ে গেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইমরান সরদার বলেন, এক সময় দেশে খাদ্যাভাব ছিল। তখন মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটেছেন। তখন আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল যেভাবে হোক আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। আমাদের সে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে ইতোমধ্যে। এখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করেছে।
কিন্তু বর্তমানে নিরাপদ খাদ্যের অভাব রয়েছে। তাই বর্তমানে আইপিএম পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাদ্য কিভাবে উৎপাদন করতে হয় তা কৃষকদের হাতেকলমে দেখিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহিনা বেগম বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৪ নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নকে আইপিএম মডেল ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আমরা ইউনিয়নের ৫ শ’ কৃষক-কৃষাণীকে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি ইতোমধ্যে। প্রকল্পের অধীনে জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী প্লটের জন্য সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণও প্রদান করা হয়।
আর বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে সার্বক্ষণিক কৃষক-কৃষাণীদের পাশে থেকে নানা রকম পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা।
এ সব বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ দেখে অন্যান্য কৃষক-কৃষাণীরাও জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাইনাশক ব্যবহারের আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে করে আমরা বিষমুক্ত সবজি খেতে পাচ্ছি।